গল্পের ঝুড়ি: শেষ পর্ব
আগে অনেক জায়গায় শুনেছি যে হারানো জিনিস নাকি ফেরত পাওয়া যায় ! তাই ভাইজান এর বিশ্বাসে একটু একটু আস্থা হচ্ছিল। মানে পেলে তো মন্দ হতো না!দাদা ও মানসিক শান্তি পেত।তো গণকের বাকি নির্দেশনার মধ্যে এটাই ছিল যে, তিন দিনের মধ্যে, যেকোন একদিনে রাতের শেষ প্রহরে দিনারটি আসবে! তবে যখন আসবে, তার পূর্ব এ ঘরটা হালকা ঝাকুনি দিবে মানে কেপে উঠবে অথবা টিনের উপর শব্দ হবে!কি ব্যাপার টা ভৌতিক লাগছে না!আমার কাছে তখন আরো বেশি! প্রথম দিন থেকেই, রাতে মাটিতে পা ফেলতেই ভয় লাগতো!
এভাবে স্বাভাবিকভাবেই দুইটা দিন পার হলো।কোন কিছুই মানে কোন নোট ই পাওয়া গেল না! আস্তে সব ভাওতাবাজি মনে হলো। ভাইজান এই দুইদিন বাড়ি ফেরার পথে, আমাদের বাড়ি হয়ে যেতেন,কোন খবর আছে কিনা তা জানতে!ফলাফল তো শূন্য! আমি বললাম কি যে করেন ভাইজান! কে যে কি বললো আর আপনি বিশ্বাস করে বসে আছেন!ভাইজান বলে,দাড়া আজকে রাতে আমিই থাকবো।দেখি কিছু হয় কিনা। নইলে ঐ গণক ব্যাটার অবস্থা খারাপ আছে!আমিও দেখে ছাড়বো।উনি কীভাবে ওখানে গণক গিরি করে!আমি আর মা ভাইজানের কথা শুনে হাসতে লাগলাম।
ভাইজান থাকাতে বেশ মজাই হলো। মা অনেকদিন পর ভালো মন্দ রান্না-বান্না করল।সবাই মজা করেই খেলাম।ভাইজান ও অনেকদিন পর বিভিন্ন আলাপ করলেন।ব্যবসার বিভিন্ন গল্প, হাসির ঘটনা!খেয়েদেয়ে প্রায় অনেক রাত এই হলো।তখন তো আর বিদ্যুৎ ছিলো না! হারিকেন আর কুপিই ভরসা।রাত ১০ টা মানে গভীর রাত।চারিদিকে আধার তার চাদর বিছিয়ে দেয়।আশেপাশে বাড়ির ভিতরে আবছা হারিকেনের আলোর আভা ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না।তবে ভাইজান খুব সর্তক!
আমি দাদা আর ভাইজানের জন্য বিছানা করে,মা কাছে গেলাম।মা শুয়ে পরেছে। আমি পাশের টেবিলে কুপির আলোয় বই পৃষ্ঠা নাড়াচাড়া করছি,আর দাদা আর ভাইজানের গল্প শুনছি! হঠাৎ ভাইজান বলে উঠলো ঘর টা একটু নড়ে উঠলো না! দাদা বললো কই নাতো! ঐ সময় ভাইজান সাথে সাথে উঠে, টর্চলাইট নিয়ে আসে পাশে, খাটের নিচে দেখতে লাগলো। আমি এর মধ্যে ভয়ে মশারী মধ্যে ঢুকে পরেছি!বেশ ভয় ভয় একটা অবস্থা!এভাবেই হুট করে ঘুমিয়েও পরেছি।
সকালে মা ডাকে ঘুম ভাঙলো।উঠে দেখলাম ভাইজান রাগে গজ গজ করতেছে।ওই দিন দাদা আবার গঞ্জে গিয়ে মালামাল আনবে,তাই মার কাছে টাকা চাইলেন। মা আবার বাসি ঘরে টাকা দেয় না।তাই দাদা বসতে বলেই, ঝাড়ু নিয়ে ঘর পরিষ্কার করতে লাগলেন। খাটের নিচে ঝাড়ু দেয়ার সময় দেখলেন একটা কাগজ লেগে আছে, উঠতেছে না!তাই নুয়ে যখন ই টান দিলেন, দেখলেন দিনারটা।জোরে ডাক দিলেন সবাই।
দাদা, ভাইজান, আমি দৌড়ে এলাম।দাদা তো দেখেই কান্না করে বলতে লাগলেন মা আপনে তাড়াতাড়ি এটা ভাইজানকে দেন। এই নোট এখানে আর রাইখেন না।
এরপর দাদা আর ভাইজান গিয়ে মেজ আপার দেবরকে দিনারটা ফেরত দিল।এবং এটাও জানিয়ে দিল এক সপ্তাহের বেশি এই নোট থাকবে না।তারাও অবশ্য এই কথায় পাত্তা দেয়নি।ভেবেছে চাপের মুখে দিতে বাধ্য হয়েছি দেখে এই সব ঘটনা বলে বেড়াচ্ছি!
অতঃপর মেজ আপার শাশুড়ি একটা টাংকে ভিতরে কাচের বয়ামের মধ্যে দিনারটি রেখে, তালা মেরে, চাবি নিজের কোমরে রাখলেন।এবং তারা নিজেরাই লোক ঠিক করে বাড়িতে আনলেন ভাঙাবেন বলে।কিন্তু নোট বের করতে যাবেন দেখা গেল, সব ঠিক মতই আছে খালি নোট টা উধাও!
এটাই আমার জীবনে অদ্ভুত ঘটনার মধ্যে একটি!
মা! একটাও কথা না, অনেক রাত হয়েছে ঘুমাও!
আচ্ছা শুভরাত্রি !
Congratulations @rodmila! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
Your next target is to reach 800 upvotes.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Check out the last post from @hivebuzz: