অনুপ্রেরণা-১

avatar
(Edited)
}

![]()

[Source](https://www.pexels.com/photo/black-pencil-on-white-paper-68562/)

---

আজ অনেকদিন পরে লিখতে বসলাম।আসলে লেখালেখির সাথে মনের একটা সংযোগ আছে।মন যদি সায় না দেয় তাহলে কেন জানি কলম ও কথা বলতে চায় না।খাতা থেকে যায় শূন্য।অপলক চাহনি আর কিছু প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।অবশেষে সেই মনটাই সায় জানালো।তার কারণ টা অবশ্য ভিন্ন! আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে একজন হাসি খুশি আন্টি থাকেন।হাসি-খুশি কথাটার আগে বলেছি কারণ তাকে দেখলেই মনে হয় তার হাসিতেই মুক্তা ঝড়ছে এমন!যেমন ই প্রাণ খোলা তেমনই গল্পবাজ।মনে হয় গল্পের ফুল ঝুড়ি নিয়ে বসে আছেন।নিমিষেই শ্রোতা হয়ে যাই আমরা। এবারের আন্টির গল্পটা বেশ মজার। সেটাই ইচ্ছা হলো সবার সাথে একটু ভাগাভাগি করি।

----

গল্পের সময়কাল দুইহাজার এর দিকে।যুবতী বয়সের মেয়ে তিনি।প্রাণ উচ্ছল তো ছিলেনই সাথে ছিলেন বেশ দুষ্ট।তার দস্যিপনাতে সারা বাড়ি মেতে থাকতো।প্রথমেই কিছু ব্যাপার বলি,আগের যুগের মহিলারা দেখা যেত,চুলের খোপা বড় করার জন্য এক ধরনের কালো সুতা দিয়ে পরচুলা তৈরী করতো।এই রকম পরচুলা আন্টির মা ও ব্যবহার করতো।আর বর্ষা সময়টা দেখা যেত, বাড়ি-ঘরে প্রায় সাপ আসতো বা দেখা যেত!তো সাপ তখন একটা আতংকের নাম ছিলো।কোন না কোন ঘরে প্রতিদিন একটা -দুইটা সাপের দেখা মিলতো। বর্ষার দিনগুলো এমনি ছিলো তখন!এরকমই এক বর্ষাবেলায় বিকালে ঘুম থেকে উঠে, ভাবলেন চা খাবেন।তো হাত -মুখ ধোবার আগে চুল বাধার জন্য যেই না চিরুনীটা উঠালেন! দেখলেন বিশাল লম্বা আর কালো একটি সাপ, দেখে সে এতোটাই ভয় পেয়ে গেলেন যে, দৌড়ে  যেতে গিয়ে,কাপড়ে পা আটকে গিয়ে সাথে সাথে পরে গেলেন। 

----

এভাবে পরে যাওয়াতে তার হাত, কাঠের দরজার পাটাতনে লেগে খুব গুরুতর আহত হয়।তার চিৎকার শুনে আশেপাশের মানুষ লাঠি নিয়ে আসে সাপ মারার জন্য।পরে দেখা যায়,আসলে সেটা সাপ ছিলো না! অবাক হলেও যেটা হয়েছিলো,সেটা হলো আন্টি তার মায়ের চুল বাধার পরচুলা! সামান্য এই পরচুলার জন্য তার জীবনে বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিল! 


তখন সামান্য ব্যথা ভেবে হালকা গরম তেল দিয়ে মালিশ করে ভেবেছিলেন ঠিক হয়েছে যাবে।বরফ দিতে পারলে ভালো হতো হয়তো কিন্তু বিদ্যুৎই যেখানে নেই,ফ্রিজ এর কথা ভাবা অস্বাভাবিক!এভাবে বেশ কিছুদিন চলেও গেল কিন্তু যেটা হলো না সেটা হলো ব্যাথা তো কমছেই না উল্টো তার ফুলে ভেপে উঠলো। আন্টির এক চাচাতো ভাই ছিলো। ডাক্তার। বড় ডিগ্রিধারী না।গ্রামের ডাক্তার আর কি! তো তিনি গেলেন তার সেই ডাক্তার ভাইয়ের কাছে।হাত দেখে সে প্রথমে ভড়কে গেলেন। বললেন খুব তাড়াতাড়ি এটাকে ড্রেসিং করতে হবে, কেননা হাতে পচন ধরেছে!হাড় পর্যন্ত চলে গেলে, হাত কেটে ফেলা ছাড়া উপায় থাকবে না।সবাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ল।কি করবে?  আন্টির মা আর ভাইরা সবাই বলতেছিলো যে তার ডাক্তার ভাই করুক চিকিৎসা। কিন্তু আন্টি তার ডাক্তার ভাইকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো যে সে পারবে কিনা?তার উত্তরে তার ভাই বললেন যে সে পারবে না এবং শহরে  নিয়ে যেতে বললেন ওখানে বড় ডাক্তার আছে, তারা ভালো চিকিৎসা করবে।তারপর আর কি? 

---

সবাই শহরে যাবার প্রস্তুতি নিলেন।সেখানে তার বাড়ির পরিচিত এক ভাই-ভাবী থাকেন।কথা হলো এভাবে,তারা গেলে সেই ভাবীই হাসপাতালে ভর্তি করে দিবেন।যেই কথা, সেই কাজ! সেই সময় হাসপাতালে ভর্তি না হলে, ডাক্তার দেখতো না।তবে শহরের বড় ডাক্তার আন্টিকে দেখে আশার কথা কিছুই বললেন না!জানালেন যে তারা দুইদিন দেখবেন, যদি এর মধ্যে যদি কিছুটা উন্নতি না হয় তাহলে হাত কেটে ফেলতেও হতে পারে! এই কথা শুনার পর আন্টির মা কান্নায় ভেঙ্গে পরে।তারপর ও আন্টিকে ভর্তি করে দিলেন যে কিছুতো ব্যবস্থা হোক।বলতেই আন্টির চোখ ছল ছল করে উঠলো পানিতে। 

জীবনটা আসলে বিছিন্ন।হরেক হাসির মাঝে হাজারো দুঃখ। তারপর বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা থাকে।



0
0
0.000
0 comments