কাস্টডি — বাস্তবতা অবলম্বনে ছোটোগল্প

avatar

ইয়াসমীনের ছেলেটার বয়স এখন কত হবে? ২০ নাকি ২২? আহ ছেলেটা তাকে কত মধুর যন্ত্রণাই না দিয়েছে। রাজু যখন পেটে তখন সবাই বলতো জমজ বাচ্চা হবে। হলোও তাই, তবে শুধু রাজুকেই বাচানো গেলো!

পোলাটা আল্লায় দিলে ভালোই কাঁনতে পারতো। কানলে শুধু কোলে নিলেই হবে না, কোলে নিয়ে হাটতে হবে, হেটে হেটে ঘুম পারাতে হবে। যখনতখন কাঁদবে, লোকজনের মাঝখানে ব্লাউজের বোতাম খুলে দুধ খাওয়াতে হবে। কয়েকজন লোলুপ দৃষ্টিতে বুকের দিকে তাকাবে।

রাজু কথা বলা, হাটতে শিখা, দুটোই আয়ত্ত করেছিলো একটু পরে। এটা নিয়েও শ্বাশুরী তাকে কথা শুনাতো। সাংসারিক পার্থিব সকল বেদনাই ছেলেটার মুখের দিকে তাকালে ভুলে যেতো ইয়াসমীন। আহারে বাচ্চাটা ভাত মেখে খেতে পারতো না, কাটা বাছতে পারতো না। ভাত মেখে মাছের কাটা বেছে প্লেটের চারদিকে সাজিয়ে দিতো সে। খাওয়া শেষে হাত ধুয়ে এসে ছেলেটা তার আঁচলেই মুখ মুছবে। বড্ড সুখের জ্বালাতন।

ইয়াসমীনের মা হবার আগে এলার্মের শব্দে ঘুম ভাংতো না। কিন্তু পরে রাজুর কান্নার আওয়াজে একলাফে ঘুম থেকে উঠে যেতো। আজও ট্রেনে তার পাশের সিটের বাচ্চার কান্নায় ঘুম ভেংগে গেলো। পাশের মেয়েটা নতুন মা হয়েছে। বুকের দুধ খাওয়াতে লজ্জা পাচ্ছে। অপর পাশ থেকে হায়েনার দৃষ্টিতে দাড়িওয়ালা একজন লোক পান চিবুতে চিবুতে দুধ খাওয়ানো দেখছে। ইয়াসমীন জানালার পাশের সিটটা তরুণী মা'কে ছেড়ে দিয়ে ঠিক পাশেই ওদের গা ঘেষে বসলো। পাঞ্জাবী পরা লোকটা এখন একটুও বিচলিত না হয়ে পকেট থেকে চিরুনি বের করে দাড়ি আঁচড়াচ্ছে।

ট্রেনের জানালা দিয়ে এক দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে আছে ইয়াসমীন। ছলছলে চোখে অভিমানের সূরে আল্লাহকে বলছে, "খোদা এ তোমার কেমন দুনিয়া, এ কেমন আইন যে একটা মায়ের বুক থেকে তার ছেলেকে নিয়ে যায়"। ১৬ বছর আগে কাস্টডি হারানোর দিনে রাজুকে নিয়ে যাবার দৃশ্যটা চোখে ভেষে আসছে ইয়াসমীনের। মাথায় একটা বড় ঘোমটা দিয়ে সে আড়ষ্ট কন্ঠে বলে উঠলো " আমার রাজু, আমার বাপজান"

— কাস্টডি



0
0
0.000
2 comments