রোগ-বালাইঃ শ্বাসনালীতে খাবার আটকে যাওয়া [food stuck in throat] বা choking

avatar

কয়েকদিন আগে @hafizullah ভাই একটা পোষ্ট করেছিলেন যেখান choking সম্পর্কে কথা বলেছিলেন এবং আমাকে ট্যাগ করেছিলেন যেন এ সম্পর্কে আমি কিছু কথা বলি। আজকের এই পোষ্টটি হাফিজুল্লাহ ভাইয়ের সেই পোষ্টেরই উত্তর।

Choking বা শ্বাসনালীতে খাবার আটকে যাওয়া হচ্ছে একটা মেডিকেল ইমার্জেন্সি। সময়মত খাবার দ্বারা আটকানো শ্বাসের রাস্তা খোলা সম্ভব না হলে একজন মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। Choking এর ঘটনা যেহেতু খাবার খাওয়ার সময় ঘটে, তাই এটা বাসাবাড়িতে কিংবা রেস্টুরেন্টেই বেশী হয়, যেখান থেকে choking এ আক্রান্ত ব্যক্তিকে সময়মত হাস্পাতালে বা ডাক্তারের কাছে নেয়া সম্ভব নাও হতে পারে। তাই সব মানুষেরই এটা সম্পর্কে একটা ধারণা থাকা দরকার, যেন তাদের সামনে কেউ আক্রান্ত হলে ঘাবড়ে না গিয়ে ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে।

Choking সম্পর্কে জানার আগে কয়েকটি বিষয় আমাদের জানা দরকার। আমাদের গলায় দুইটা পাইপের মত অংগ আছে। সামনের দিকে শ্বাসনালী বা শ্বাসের রাস্তা (Larynx, trachea) যেটার মাধ্যমে ফুসফুসে বাতাস যাওয়া আসা করে। পেছনের পাইপটা (esophagus) হচ্ছে খাবার-পানি যাওয়ার রাস্তা।

throat01.jpg
image source Larynx বা শ্বাসনালী এবং Esophagus বা খাদ্যনালী

শ্বাসের রাস্তা দিয়ে বাতাস ছাড়া অন্য কোন কিছুই ঢুকতে পারে না। এর মুখে একটা পর্দা থাকে যাকে epiglottis বলে। Epiglottis এর কাজ হচ্ছে শ্বাসনালীতে কোন কিছু ঢোকা বা বের হওয়া কে নিয়ন্ত্রণ করা। দুইটা সময় এটা খোলা থাকে।

  • যখন আমরা শ্বাস নেই বা ছাড়ি।
  • যখন কথা বলি বা কোন শব্দ করি।

আর epiglottis শ্বাসনালীর মুখ বন্ধ রাখে যখন আমরা খাবার গিলি (ঢোক গিলি) বা পানি গিলি বা থুথু গিলি। শুধু এই গিলার মুহূর্তটুকু শ্বাসনালীর মুখটা বন্ধ থাকে, কারণ, বন্ধ epiglottis উপর দিয়েই খাবার পিছনের দিকে গিয়ে খাদ্যনালীতে প্রবেশ করে। খাবার গেলার মুহুর্তে কোন কারণে যদি শ্বাসনালীর মুখ খুলে যায় বা খোলা থাকে, তাহলে ঐ খাবারটুকু শ্বাসনালীতে ঢুকে যাবে। কয়েক লাইন উপর গিয়ে আরেকবার দেখে আসুন কখন শ্বাস নালী খোলা থাকে (শ্বাস নেয়ার বা ছাড়ার সময়) বা খুলে যায় (কথা বলা বা কোন শব্দ করার সময়। এই বিষয়টি আমাদের পরে লাগবে।

নিচের ভিডিওটিতে swallowing বা খাদ্যগলধঃকরণের সময়ের প্রক্রিয়াটা দেখানো হয়েছে।

সৃষ্টিকর্তা আমাদের শরীরে অনেকগুলো protective mechanisms তৈরী করে দিয়েছেন। শ্বাসনালীতে বাতাস ছাড়া অন্য কোন কিছু ঢুকতে গেলেই সাথে সাথে কাশির মাধ্যমে তা বের করে দেয়া এরকম অনেকগুলো mechanisms এর একটা। তাই কাশি সবসময় রোগ নয়, এটা কখনো কখনো রোগ ( এমনকি মৃত্যু) থেকে বাঁচার একটা উপায়।

খাবার গেলার এই পুরো প্রক্রিয়াটা একটা সমম্বিত পদ্ধতির (coordinated ways) মাধ্যমে হয়, যা সৃষ্টিকর্তা অলরেডি তৈরি করে রেখেছে। যখন কোন খাবার মুখ থেকে গলা অতিক্রম করে খাদ্যনালীতে যায়, এপিগ্লটিসের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের শ্বাস প্রক্রিয়া ক্ষণিকের জন্য বন্ধ থাকে। খাবার খাদ্যনালীতে ঢোকার সাথে সাথেই শ্বাসনালী খুলে যায়। খাবার গ্রহণ করার পুরা সময়টা এই প্রক্রিয়া পর্যায়ক্রমে চলতে থাকে।

এখন আসুন আমরা আমাদের মুল বিষয়ে ফিরে যায়। আমাদের অনেকেরই choking এর রোগী দেখার অভিজ্ঞতা থাকতে পারে। Choking এর ক্ষেত্রে এটা যে choking তা ধরতে পারাটাই বেশী গুরুত্বপূর্ন। এজন্যে আসুন আগে এটার লক্ষণগুলো জেনে নেয়া যাক। মনে রাখতে হবে যে নিচের লক্ষনগুলো কোন কিছু খাওয়ার সময় হতে হবে।

  • হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট আরম্ভ হওয়া।
  • খেতে খেতে খুব জোরে জোরে কাশি দেয়া।
  • খেতে খেতে হঠাৎ করে হাত দিয়ে গলা খামচে ধরা (এটাই সবচেয়ে বেশী দেখা যায়। এক হাত বা উভয় হাত দিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তি তার গলা খামচে ধরতে পার।
  • হঠাৎ করে শ্বাস বন্ধ হয়ে পড়ে যাওয়া বা কথা বলতে বলতে কথা বন্ধ হয়ে যাওয়া।

উপরের লক্ষণগুলো দেখা গেলে বুঝতে হবে যে আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাসনালীতে কোন খাবার আটকে গেছে।

এখন, চলুন জেনে নেই কি কি কারণে choking হতে পারে। কিছু কারণ avoid করা সম্ভব।

  • এটা এমন একটা সমস্যা যা কিনা একজন শতভাগ সুস্থ্য মানুষেরও হতে পারে। খাবার ঠিকমত চিবিয়ে নরম না করেই গিলতে গেলে অসাবধানতবশত শ্বাসনালীতে চলে যেতে পারে। অর্থাৎ তাড়াহুড়া করে খাবার খেতে গেলে অনেক সময় উপরে উল্লেখিত coordinated ways এর coordination ঠিকমত হয় না। ফলশ্রুতিতে খাবার শ্বাসনালীতে প্রবেশ করতে পারে।
  • খাবার খেতে খেতে কথা বলা বা হাসাহাসি করা choking এর অন্যতম একটা কারণ। খাবারের লোকমাটা এপিগ্লটিস অতিক্রম করার সময়েই যদি কেউ কথা বলে ওঠে, তাহলে শ্বাসনালীর মুখ খুলে যেতে পারে। অথবা হাসাহাসির মধ্যেই কেউ লোকমাটা জিহ্ববা দিয়ে পেছনে ঠেলে দেয়, তাহলে খোলা মুখ পেয়ে খাদ্য শ্বাসনালীতেই প্রবেশ করতে পারে।
  • Alcohol abusers দের এই swallowing বা খাদ্যগলধঃকরণ প্রক্রিয়াটা অনেকসময় নরমাল থাকে না। তাদের choking হতে পারে।
  • কিছু কিছু ওষুধ বা রোগের কারণে এই swallowing প্রক্রিয়াটার ব্যাঘাত ঘটে choking হবার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। যেমন Parkinson's disease এ ভোগা ব্যক্তি।

আরেকটা বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন এখানে। অনেকসময় তাড়াহুড়া করে খেতে গিয়ে, ঠিকমত না চিবিয়েই, বড় একটা লোকমা গিলে ফেলে অনেকে। এটা খাদ্যনালী দিয়ে যেতে সময় লাগে। মনে হয় যেন খাবার নিচে নামছে না। এক্ষেত্রে কাশি থাকে না। এটা choking না। পানি খেলে এই খাবারটা নেমে যায়। কিন্তু choking হলে আটকানো খাবার শ্বাসনালী থেকে বের না হওয়া পর্যন্ত পানি দেয়া যাবে না। হিতে বিপরীত হয়ে পানিও শ্বাসনালীতে চলে যেতে পারে।

Choking এর ক্ষেত্রে কি করনীয়?

YouTube এ search দিলে অনেক ভিডিও পাওয়া যাবে, যেখানে আমরা শ্বাসনালীর আটকানো খাবার বের করার উপায় সম্পর্কে জানতে পারবেণ। এখানে অল্প কয়েকটা কথা উল্লেখ করছি।

নিকটজনের কারও choking শুরু হলে, খেয়াল করতে হবে উনি কথা বলতে পারছেন কিনা বা কাশি দিচ্ছেন কিনা। যদি কথা বলতে পারেন, তাহলে বুঝতে হবে খাবার দ্বারা শ্বাসনালী পুরোটা আটকায় নাই। কিছুটা রাস্তা খালি আছে। তাকে বলতে হবে জোরে জোরে কাশি দেন। কাশির মাধ্যমেই ভুল রাস্তায় চলে যাওয়া এই খাবার বের হয়ে যায় বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই।
যদি কার্যকর কাশির মাধ্যমে বের না হয়, তাহলে থাকে সাহায্য করতে হবে। এক্ষেত্রে দুইটা কাজ করতে হবে পর্যায়ক্রমে। পিঠে হাতের তালু দিয়ে ৫ বার থাপড়ানো (back blow) এবং উপর পেটে দ্রুত উপরের দিকে (abdominal thrust) ৫ বার চাপ দেয়া। একই সাথে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কাশতে বলতে হবে।
নিচের ভিডিওটিতে অজ্ঞান হয় নাই, এমন আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে কি করনীয় তা দেখানো হয়েছে।

অনেক সময় choking এর শুরুতেই কথা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এটার অর্থ হচ্ছে complete block হয়ে গেছে শ্বাসনালী। সেক্ষেত্রে সাথে সাথেই back blow এবং abdominal thrust শুরু করতে হবে।

কেউ যদি অজ্ঞান হয়ে যায়, তাহলে সরাসরি CPR শুরু করতে হবে। সেক্ষেত্রে হাত দিয়ে খাবারটা বের করার চেষ্টা করতে হবে। নিচের ভিডিওটিতে একজন অজ্ঞান হয়ে যাওয়া choking victim এর ক্ষেত্রে কি করনীয় তা দেখানো হয়েছে।

Choking এমন একটা অবস্থা যেখানে ১ সেকেন্ডও অপচয় করার সুযোগ নাই। দ্রুততার সাথে উপরে উল্লেখিত পদক্ষেপ গুলো নিতে পারলে choking এ আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাচানো সম্ভব। না করতে পারলে আক্রান্ত ব্যক্তির (যদি শ্বাসনালী পুরা বন্ধ হয়ে যায়) মৃত্যু অনিবার্য। আসুন আমরা এটা সম্পর্কে জানি এবং অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে choking এ আক্রান্ত একজন ব্যক্তিকে বিপদ থেকে উদ্ধার করি ইনশাআল্লাহ।

hafiz34.gif



0
0
0.000
5 comments
avatar

Vai khub sundor response and bekkha gula amar kache valo legese, bishesh kore idea ta ekhon full clear hoye gese.
Thanks for sharing your excellent feedback.
Have a wonderful day ❤️

0
0
0.000
avatar

জেনে ভাল লাগছে যে ভিডিওটি আপনার কাছে ভাল লেগেছে এবং বিষয়টা ক্লিয়ার হয়েছে।
ধন্যবাদ উৎসাহমুলক কমেন্ট এর জন্যে।

!ENGAGE

0
0
0.000
avatar

Thank you for your engagement on this post, you have recieved ENGAGE tokens.

0
0
0.000
avatar
Thank you for sharing this amazing post on HIVE!
  • Your content got selected by our fellow curator @hafizullah & you just received a little thank you via an upvote from our non-profit curation initiative!

  • You will be featured in one of our recurring curation compilations and on our pinterest boards! Both are aiming to offer you a stage to widen your audience within and outside of the DIY scene of hive.

Join the official DIYHub community on HIVE and show us more of your amazing work and feel free to connect with us and other DIYers via our discord server: https://discord.gg/mY5uCfQ !

If you want to support our goal to motivate other DIY/art/music/homesteading/... creators just delegate to us and earn 100% of your curation rewards!

Stay creative & hive on!
0
0
0.000