বিবেক জাগ্রত হোক

avatar
(Edited)

গত শুক্রবার বহুদিন পর বেড়াতে বের হলাম, গন্তব্য শেফস টেবিল, 100 ফিট। বাচ্চাগুলি ঘরে থাকতে থাকতে অস্থির হয়ে উঠেছিল, উঠবেই বা না কেন? বিগত ছয় মাসের অধিক সময় ধরে স্কুল বন্ধ, করোনা আতঙ্কে অভিভাবকরা একটু বেশিমাত্রায় সচেতন, এমনকি পাশাপাশি ফ্ল্যাটে থাকার সত্বেও বাচ্চাদের মুখ দেখাদেখি প্রায় বন্ধ। এমনিতেই এই ইট-কংক্রিটের শহর বাচ্চাদের শৈশব কেড়ে নিয়েছে, গ্রামের বাঁধভাঙা দুরন্ত শৈশব তাদের কল্পনারও অতীত, তার ওপর বিশ্বব্যাপী করোণা অতিমারি সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে।

করোনা ভয় কে জয় করে আমরা গন্তব্যে পৌছালাম পড়ন্ত বিকেলে। কর্তৃপক্ষ বিশাল জায়গা নিয়ে রেস্টুরেন্ট করেছে এবং বাচ্চাদের খেলার জায়গাটিও বেশ বিশাল। দীর্ঘক্ষন পার্কে অবস্থানের কারণে আমার সহধর্মিণীর প্রকৃতির ডাকে প্রসাধন কক্ষে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। দেশের বর্তমান অস্থির প্রেক্ষাপটে আমি তাকে একা ছাড়তে মোটেও সাহস পেলাম না।

উপরের অংশটুকু পড়ে আপনাদের হয়তো মনে হতে পারে এটা কোন রেস্টুরেন্টের রিভিউ অথবা করনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার প্রস্তুতি। আসলে এর কোনোটাই নয়, আপনারা হয়তো জানেন মূল শিল্পী গান গাওয়ার আগে যেমন বাদ্যযন্ত্রী দল গিটারের টুংটাং শব্দে পরিবেশের সাথে নিজেদেরকে মানিয়ে নেয়, এটা সেরকম কিছু মনে করতে পারেন।

একটি স্বাধীন দেশের একজন স্বাধীনচেতা নারীকে ওয়াশরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে পাহারা দিতে হয়, এর চেয়ে দুঃখের আর কি আছে? একদল উন্মত্ত হায়নার ভয়ে নারী-পুরুষ সবাই আজ আতঙ্কিত! এই বুঝি কখন কাকে ধরে টান দিলো। নারীরা আতঙ্কিত তাদের সম্মানের ভয়ে আর পুরুষরা নারীদের চেয়ে বেশি ভীত তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব রক্ষার ভয়ে। একজন পুরুষকে বেঁধে যখন তারই সামনে একদল মানুষরূপী জানোয়ার তার সহধর্মিনী কে বিবস্ত্র করে উল্লাসে মেতে ওঠে ভোগের উৎসবে, এটাতো এই হতভাগা মানুষটির জন্য মৃত্যু স্বরূপ।

F5FD384EDCD14CE4A157ED4BB931ED15.jpeg

প্রাচীনকালে সতীদাহ প্রথা চালু ছিল, যেখানে স্বামী মারা গেলে তার সাথে স্ত্রীকে সহমরণে পুড়তে হতো চিতার আগুনে। ওটা হয়তো দৃশ্যমান আগুন ছিল কিন্তু একজন পুরুষের জন্য তার সামনে তার স্ত্রী এর শ্রীলতাহানির দৃশ্য বুকের মধ্যে আজীবনের জন্য একটা অভিশপ্ত চিতা জ্বালিয়ে দেয়ার শাস্তি।

এতক্ষণে আপনারা নিশ্চয়ই বুঝেছেন আমি কোন ঘটনার প্রেক্ষাপটে কথাগুলো বলছি। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের ঐতিহ্যের উপর কালিমা লেপন করে একদল ছাত্র নামধারী কুলাঙ্গার এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে। আপনাদের কাছে মনে হতে পারে এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা আসলে মোটেও তা নয়। বাংলাদেশ প্রতিদিন গড়ে চারজন করে নারী ধর্ষিত হচ্ছে যা কিনা অনেক দেশের তুলনায় বেশি।

যে মেয়েটিকে জীবিত থাকতেই মৃত্যুর স্বাদ দেয়া হলো, যে পুরুষটিকে স্ত্রীকে বাঁচাতে না পারার দায়ে পুরুষত্বহীনতার অনুভূতি দিয়ে বুকে চিতার আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হলো, এর কি কোন বিচার নেই? যদি এদের দেশের নিয়ম-কানুন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডও দেয়া হয় তবু কি এই দম্পতির জ্বালা মিটবে? আমি তো মনে করি এই কুলাঙ্গার গুলোকে বাঁচিয়ে রেখে তিলে তিলে মৃত্যু দেয়া উচিত। আমি একটি ভিডিওতে দেখেছিলাম যে ধর্ষণের দায়ে একজন বিচারপতি ধর্ষিত নারীর সামনে ধর্ষকের গোপনাঙ্গ কেটে ফেলে, এদের ক্ষেত্রে তাই হওয়া উচিত। তবে যদি একটু হলেও শান্তি মিলে।

দিনে দিনে সভ্যতা যতটা উৎকর্ষতা লাভ করছে মানুষ কি সমান তালে ততটাই বর্বর হচ্ছে? এই বর্বরতার মধ্যেও আমাদের বাঁচতে হবে এবং মাথা উঁচু করেই বাঁচতে হবে। আজ সময় এসেছে নারীজাতির ‘অবলা’ তকমা উঠিয়ে ফেলার। সৃষ্টিকর্তা নারীদেরকে শারীরিকভাবে পুরুষদের তুলনায় তুলনামূলক দুর্বল করে সৃষ্টি করেছেন কিন্তু মানসিকভাবে নয়, সেই মানসিক শক্তি কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শারীরিক শক্তি এবং কিছু ছোটখাটো টেকনিক এপ্লাই করলেই বা ক্ষতি কি? রেখে দেন না একটি ধারালো ছোরা সাইড ব্যাগের ভেতরে এবং কেটে দিন ওই সব নরপশুদের গোপনাঙ্গ যারা আপনাদের গোপনাঙ্গের দিকে লোলুপ দৃষ্টি দেয় এবং তা ভোগ করতে চায়। বিচার বা বিচারকের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করার কি দরকার?

উপরের কথাগুলো উত্তেজিত মনের বহিঃপ্রকাশ। তবে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের মানবিক গুণাবলী গুলোকে জাগ্রত করতে হবে। মানুষের বিবেককে জাগ্রত করতে হবে। কারণ মানুষ তার বিবেকের কাছেই একমাত্র পরাধীন।এটাই একমাত্র পরাধীনতা যাকে ভালো গুণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। তাই আসুন আমরা ঐ সব নরপশুদের বিবেককে জাগ্রত করতে সচেষ্ট হই যারা কিনা তাদের ভিতরের ঘুমন্ত পশুটাকে এখনো জাগ্রত করেনি।



0
0
0.000
6 comments
avatar

উপরের কথাগুলো উত্তেজিত মনের বহিঃপ্রকাশ।

আপনার মনের এই বহিঃপ্রকাশ আমাদের সবার মনেরই বহিঃপ্রকাশের সাথে মিলে যাবে। না মিললেই বরং সে এই ধর্ষণকে একপ্রকার সাপোর্ট করা হবে।

আপনার সাথে একমত। এদেরকে খুচিয়ে খুচিয়ে দিনের পর দিন তিলে তিলে মারা উচিত।

0
0
0.000
avatar

ঠিক বলেছেন ভাই। এই শ্রেণীর মানুষগুলোর এরকম বিচার হওয়া উচিত। আপনাকে ধন্যবাদ সুন্দর একটি কমেন্ট করার জন্য ।

0
0
0.000
avatar
(Edited)

আমি শুধু ভাবতে থাকি যে এদের কি পরিবারে কোনো নারী নেই নাকি। তাদের মা,বোন বা স্ত্রী এর সাথে এরকম একটা ঘটনা ঘটতে পারে কল্পনা করলেই তো শরীর শিউরে উঠার কথা।

ভাই বলতে গেলে অনেক কিছুই বের হবে, তাওতো কোনো পরিবর্তন আসবে বলে দেখি নাহ। সমাজটা যে রসাতলে চলে গেল। নিজের ছোট একটা বোন আছে, এই সমাজে সেও কতটুকু নিরাপদ তা নিয়েও প্রতিনিয়ত একটা চিন্তা থেকেই যায়।

0
0
0.000
avatar

এরা মানুষরূপী জানোয়ার ভাই, এইসব বিষয়ে ওদের মাথার উপর দিয়ে যায়। মানুষের ন্যূনতম মনুষ্যত্ববোধ টুকু আজকাল দেখা যায় না। আপনাকে ধন্যবাদ সুন্দর একটি কমেন্ট করার জন্য।

0
0
0.000
avatar

হ্যা ভাই, একদম ঠিক বলেছেন।

0
0
0.000