সমাজের মাছি..........
আনিস সাহেবের বাজারের মিষ্টির দোকান থেকে, অনেক সময় অনেকেই এসে তার মিষ্টি ফাও খেয়ে যায়। মুখ লজ্জায় এবং ভয়ে কিছু বলতে পারেনা আনিস সাহেব। তাই আনিস সাহেব নিজেই একা একা মিষ্টির দোকানে কাজ করেন। মাঝে-মধ্যে আনিস সাহেবের ছোট ছেলে অনিক ( অনিকের বয়স ৯ বছর এবং সে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে) দোকানের ক্যাশে বসে বাবাকে সাহায্য করেন। সেই সময়ে আনিস দোকানের পিছনে ছোট একটি রুমে মিষ্টি বানাতে চলে যায়।আজ ও আনিস মিষ্টি বানাচ্ছেন আর তার ছেলে অনিক ক্যাশে বসে আছে।
এবার দোকানে সমাজের মাছির আগমন
একটি লোক দোকানে প্রবেশ করল এবং অনিক কে বলল মিষ্টি দেয়ার জন্য।কিন্তু অনিক বলল আগে টাকা দেয়ার জন্য ।কেননা তার বাবা তাকে শিখিয়ে দিয়েছিল ,কেউ আসলে আগে টাকা নিবি । তারপর মিষ্টি দিবি এবং একটি মিষ্টির জন্য ১০ টাকা নিবি। আর ১ কেজি মিষ্টি ২০০ টাকা বিক্রি করবি।
তাই অনিক মিষ্টি দিতে রাজি হলো না। কিন্তু লোকটি চেঁচিয়ে বললো, তোর বাবাকে বল ।মাছি এসেছে মিষ্টি খেতে। তোর বাবাকে বল, মাছি মিষ্টি খেয়ে ফেলছে। লোকটি নিজের নাম মাছি বলে অনিককে জানাল।
এবার অনিক তার বাবাকে বললো বাবা মাছি মিষ্টি খেয়ে ফেলতেছে। কিন্তু টাকা দিচ্ছেনা।
আনিস সাহেব আশ্চর্য হয়ে মনে মনে ভাবতে থাকলো, কি ছেলেরে বাবা! মাছি মিষ্টি খাচ্ছি একথাও তার বাবাকে জানানো লাগে। মাছি মিষ্টি খেলে আর কয়টা ইবা খেতে পারবে!
এবার আনিস তার ছেলেকে ডাক দিয়ে বলল ,মাছি আর কতটাই বা মিষ্টি খেতে পারবে। খাক, মাছি যতটা খেতে পারে।
একথা শুনে মাছি (মাছি ওরফে ভন্ড লোকটি যার নাম আসলে মাছি নয়। এলাকাযর একজন ফপর দালাল, ভন্ড অসাধু ব্যক্তি। জাদ কাজই হচ্ছে ফপর দালালি করা। তার আসল নাম হচ্ছে ডেঙ্গা খালেক। এক জায়গায় দুই নম্বরি করতে গিয়ে ধরা খেলে পাবলিক মেরে একটি হাত ভেঙ্গে দেয়। সেই থেকে সে ডেঙ্গা খালেক নামে পরিচিত।) মনের সুখে ইচ্ছে মত মিষ্টি খেতে থাকলো।
মাছি এভাবে কতক্ষন মিষ্টি খাওয়ার পর ,এবার বললেন একটা প্যাকেট দে, কিছু মিষ্টি নিতে হবে। অনিক ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছে। মাছি তার মনের মত অনেকগুলো মিষ্টি প্যাকেটে নিল। এবার দোকান থেকে বের হয়ে হাটা শুরু করে দিল।
এবার অনিক চিৎকার করে বাবাকে বললো,বাবা মাছি অনেকগুলো মিষ্টি প্যাকেটে করে নিয়ে যাচ্ছে। মিষ্টি কোন টাকা দেয় নি। মাছি বসে অনেকগুলো মিষ্টি খেয়ে গেছে , আবার নিয়ে ও যাচ্ছে।
এবার ছেলের কথায় কিছুটা ধাক্কা খেলো আনিস সাহেব। মাছি মিষ্টি খেয়েছে ঠিক আছে, কিন্তু প্যাকেটে করে আবার মিষ্টি কিভাবে নিয়ে যাচ্ছে? আমার ছেলের মাথা নষ্ট হয়ে যায় নি তো? পরে আনিস দোকানে আসে। তার ছেলেকে এসে বলল,
বলতো মাছি আবার কিভাবে মিষ্টি নিয়ে যায় প্যাকেটে করে? তোর মাথা কি ঠিক আছে!
এবার অনিক বলল, তুমি কি ভাবছো ছোট মাছি। সে তো এক লোক ছিল। উনার নাম নাকি মাছি।
এবার আনিস পুরো ঘটনাটি বুঝতে পারল। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয় কতক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। কাকে দোষ দেবে নিজেকে ?নাকি তার ছেলেকে? কিছুই তার মাথায় ঢুকলো না।
সমাজে এমন অনেক মাছি আছে ।যারা ছদ্মবেশ ধারণ করে গরিবের পেটে লাথি মারে। অনেক দোকানদারকে এভাবে ঠকায়। শহরের প্রতিটি গলিতে কিংবা গ্রামের অথবা পাড়ার প্রতিটি মোড়ে এমন অনেক মাছি আছে। যাদের কাজই হচ্ছে মানুষকে ঠকানো। তারা কিভাবে মানুষকে ঠকিয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করে।
মাছি নামক চরিত্র দিয়ে , আমার লেখায় সমাজের কিছু ব্যক্তির চরিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। যারা ফপর দালালি করে কিংবা মানুষ ঠকিয়ে জীবনযাপন করে। এটা তাদের নেশা নয় বরং এটাকে তারা পেশা হিসেবেই বেছে নেয়। যাতে যে কারণে অতিষ্ট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
লেখাতে কোন ভুল ত্রুটি কিংবা অসামঞ্জস্য পেলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।এবং সুন্দর সুন্দর পরামর্শ দিয়ে আমাকে সহযোগিতা করবেন। আপনাদের সহযোগিতা আমাকে আমার কাজে উৎসাহ যোগাবে। ধন্যবাদ সকলকে।
আপনার ব্লগটির প্রথম অংশে একটুখানি হাসি পাইলাম।পরে গল্পটির মুল উদ্দেশ্য শেষের লাইনগুলো পড়ে বুঝলাম।অনেক সুন্দর লিখেছেন ❤️❣️
ধন্যবাদ ধৈর্য্য সহকারে পড়ার জন্য এবং মূল বিষয়বস্তু বুঝার জন্য।
আমি একটি ক্যান্টিনে দেখেছি, কিছু ছেলেপেলে ক্যান্টিনে খাওয়া দাওয়া করার পর, কোন বিল দেননি। এমনকি দোকানদার ও তাদের কাছ থেকে খাবারের বিল খোঁজার সাহস পায়না ।কিছু বললেই তারা দোকানদারকে মারধর করবেন এবং দোকানপাট ভাঙচুর করবেন। সেই ভয়ে কখনো তাদের কাছ থেকে খাবারের বিল খোজেন না।
ধন্যবাদ লেখাটি কষ্ট করে পড়ার জন্য এবং মতামত প্রদান করার জন্য।
সমাজে এমন অনেক মাছি আছে যারা গায়ের জোরে সব হাসিল করতে চায়....
আপনার ব্লগে রুপক মাছি চরিত্রটি সত্যিই খুব ভালো ছিল 🙃
ধন্যবাদ আপনাকে আমার লেখাটি কষ্ট করে পড়ার জন্য এবং আপনার মতামত প্রদানের জন্য। আমি নিজ চোখে এমন একটি ঘটনা দেখেছি। যারা দোকান থেকে খেয়ে দেয়ে কোনো বিল না দিয়েই হাঁটা শুরু করল। দোকানদার ভয়ে কিছু বলল না।