চয়ন, করোনার কারণে তার ভার্সিটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ চলছে।বাড়িতে কাটে যাচ্ছে মাসের পর মাস। সাথের মানুষজন যেখানে উদ্যোক্তা হওয়ার মতো পদক্ষেপ নিচ্ছে সেখানে সে কিছুই করছে নাহ। ইচ্ছে করে করছে নাহ যে তা অবশ্য নাহ। সবার দ্বারা সবকিছু হয়না ওটাই হলো মূলে। তবে সে খুব ভালো স্টুডেন্ট, সে ভাবলো যদি কোনো একটা টিউশন পায় তাহলে সেটা সে করাবে।করোনার কারণে বাইরে সবকিছু যেহেতু বন্ধ তাই এখন বাসায় গিয়ে পড়িয়ে ভালো একটা আয়ের সুযোগ রয়েছে।
কিছুদিন অপেক্ষা করে সে একটা টিউশন পেয়েও গেলো। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থী দুইজন, তারা ভাই-বোন পঞ্চম ও দ্বিতীয় শ্রেণির। এলাকার মধ্যে হওয়ার কারণে আমার জন্য সুবিধায় হলো। ছেলে-মেয়ে দুটো খুবই মিশুক প্রকৃতির। শুরু থেকেই তাদের আচার-আচরণ আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। তাদের নির্বোধ কথা-বার্তা গুলো। মাঝে মাঝে স্কুল বন্ধের আক্ষেপ গুলো শুনতে হয় ঘন্টা ধরে। তাদের আক্ষেপের শুরু এইভাবে যে, "স্কুল বন্ধ,বন্ধুদের সাথে দেখা হচ্ছে নাহ খেলতেও পারছি নাহ।সারাদিন বাসায় বন্দি ভালো লাগে নাহ ভাইয়া।" আসলেও তাই। তারা তো ছোট মানুষ স্কুল ছাড়া বাইরে এত বের হতে দেয়না পরিবার থেকে। যাইহোক ভালো লাগছিল তাদের সাথে সময় গুলো। আসলে মিশুক প্রকৃতির হওয়ায় পড়িয়ে তাদের খুব আনন্দ পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে তাদের এমন এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় যে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দেওয়ার উপক্রম।
হঠাৎ একদিন চয়ন লক্ষ্য করল যে তার হাস্যোজ্জ্বল শিক্ষার্থী দুজনের কেমন যেন বিষন্ন দেখাচ্ছে। প্রতিদিনের খুনসুটি করা ছেলে-মেয়ে দুটো আজ কেমন যেন ভয় ভয় দেখাচ্ছে।জিজ্ঞেস করেও সে কিছু বুঝতে পারেনি। ঠিকমতো পড়াও পড়েনি সেদিন।যাইহোক তারপর থেকে আবার আগের মতোই গেল।চয়নের মনে একটা খটকা রয়েই গেল যেটা সে সমাধান করতে পারেনি। বাচ্চাদের সাধারণ মন খারাপ ছিল নাহ,সেইদিন অন্যকিছুর আভাস দিচ্ছিল তাদের নিস্পাপ চোখগুলো।
একদিন চয়ন তাদের পড়াচ্ছে হঠাৎ ঘরের মধ্যে উচ্চস্বরে তর্কাতর্কি শুনতে পেল। ধীরে ধীরে তা বেড়ে চলছে। বুঝতে পারলো যে তাদের বাবা-মা ঝগড়া লেগেছে। সে ভাবলো আজকে তারাতাড়ি চলে যাবে এরকম পরিস্থিতি তে বাইরের একজন থাকলে তারা হয়তো বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পরবে। পরমুহূর্তেই সে তার শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেদিনের প্রতিচ্ছবি খুজে পেয়েছে। বুঝতে তার বাকি রইলো নাহ যে তারা প্রায়ই এ রকম ঘটনা দেখছে যা তাদের মাঝে খুব বাজে ভাবে প্রভাব ফেলছে।চয়ন কে তারা ভয়ে ভয়ে বললো,"ভাইয়া আপনি কি চলে যাবেন এখন? প্লিজ আরো কিছুক্ষণ থেকে যান আমাদের ভয় লাগছে।" তাদের ঝগড়া হাতাহাতি পর্যন্ত গিয়েছে। চয়ন বুঝতে পারছিল সে কি যাভে তাদের থামাতে নাকি তাদের সাথে বসে থাকবে। সে গেল নাহ কি যেন চিন্তা করে তারপর রুমের দরজা টা চাপিয়ে দিয়ে তাদের সাথে গল্প করতে লাগলো তাদের মনটাকে অন্যদিকে নেওয়ার জন্য।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর সে চলে গেল, পরদিন তাদের মা তাকে আজ পড়াতে হবেনা বলে তার সাথে কথা বলে চাইলো।তিনি সবই খুলে বললো চয়ন বুঝতে পারলো তাদের পারিবারিক সমস্যা তাদের সন্তানের উপর খুবই বিরুপ প্রভাব ফেলছে।তাদের মানসিক স্বাস্থ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এগুলোর সমাধান কোথায় তা নিয়েই তিনি সন্ধিহান।
এরকম চিএ আমাদের চারপাশে প্রায়ই দেখা যাচ্ছে। পারিবারিক কলহের মাঝে পিশে যাচ্ছে ছোটদের মানসিক স্বাস্থ্য। তাদের সুস্থ বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। যা আমাদের কারোই কাম্য নয়।সুতরাং এই বিষয়গুলোর প্রতি প্রতিটা পরিবারকে সর্তকতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। একটা সুস্থ পারিবারিক অবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ শিশুদের বিকাশের জন্য।
সময় নিয়ে লিখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ, আশা করি সবাই বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবেন এবং আমার সাথে একমত পোষন করবেন। এ বিষয়ে কোনো মতামত থাকলে দিতে পারেন কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে। দিনটি ভালো কাটুক।