নিয়মনীতিগুলোর প্রয়োগ।

avatar

আম্মুর চোখের সমস্যাটা বেড়েছে, চোখে এলার্জির সমস্যা আর ইদানীং এলার্জি জাতীয় খাবারও বেশি খাওয়া হয়েছে।তো ডাক্তারের সাথে একবার দেখা করবে বলে ঠিক হলো। সিরিয়াল এর দায়িত্ব এলো আমার ঘারে। ঠিকাচ্ছে,সকালের ক্লাসের আগে যাওয়া যাবে গিয়ে সিরিয়াল নিয়ে নিবো আম্মু গিয়ে দেখিয়ে আসবে। সকালে চোখ মেলে দেখি ঘড়িতে ৯ টা বেজে ৪০ মিনিট। শেষ, এখন আর সিরিয়াল দেওয়া হবে নাহ,ক্লাসের জন্য বেরিয়ে পড়লাম।আম্মু কিছু বকুনি ও দিয়ে দিলো মাঝখান দিয়ে।

দুপুর তখন ১ টা বেজে ৩০ মিনিট গেলাম আবার বিকেলের জন্য সিরিয়াল দিতে। গিয়ে শুনি সিরিয়াল দেওয়ার সময় নাকি ৩ টায়, আরো প্রায় দেড় ঘন্টা বাকি বাজতে। বললাম আমাকে একটা সিরিয়াল দিয়ে দিন যেহেতু এসেছি এখন, ৩ টায় আবার আসবো তারপর আবার ৫ টায় এসে ডাক্তার দেখাবো নাকি। লোকে বলে হুম তাই করতে হবে, মেজাজ গেল ক্ষেপে, একেতো সরাসরি এসে সিরিয়াল দিতে হয় যেখানে অনেক জায়গায় ফোনের মাধ্যমেই দেওয়া সম্ভব তারপর আসলাম এখন আবার এত্ত নিয়মকানুন এর বেড়াজাল। কোনো কাজ হলো নাহ,সিরিয়াল পায়নি।

বাসায় ও যাওয়া সম্ভব নাহ, বাসায় যাবো আবার আসবো একটু পর এরচে বরং বন্ধু-বান্ধব এর সাথে এসময়টা আড্ডা দিয়ে কাটিয়ে দেয়, যেই ভাবনা সেই কাজ। ঘন্টাখানেক কলেজের পিছনে কফিশপে সবাই আড্ডা দিয়ে ৩ টার দিকে গিয়ে সিরিয়াল নিয়ে আসলাম। ডাক্তার দেখাতেই হবে কিচ্ছু করার নেই।

বিকেলে বের হলাম আম্মুকে নিয়ে সেখানের উদ্দেশ্যে। সিরিয়াল নম্বর পেলাম ৪ হাহাহা। কখনো এত আগের সিরিয়াল পায়নি তাও সামনের ৩ জনের সাক্ষাৎ শেষের জন্য অপেক্ষা করতে খুব বিরক্ত হচ্ছিল। ভিতরে যাওয়া মাএই এসিস্ট্যান্ট এল এবং বলতেছে ডাক্তার এর কোনো একজন রিলেটিভ এসেছে এবং এপয়েন্টমেন্ট চাচ্ছে এক্ষনের জন্য এবং সে ভিতরে আসতে চায়। শুনে আমার বিরক্ত লাগছে আর ভাবতে লাগলাম যে আমি দুপুরে আসলাম নিয়মের বাইরে বিধায় আমায় সিরিয়াল দেওয়া হলো নাহ আবার এসে নিতে হলো এখন তিনি কি করবেন তা দেখার বিষয়।যথারিতি রিলেটিভ ভিতরে এলো আমি আর আম্মু সামনেই বসা,তিনি ২ মিনিট সময় চেয়ে নিয়ে তাকে বললেন "এখন রোগী দেখা সম্ভব নয়,আপনাকে কালকে এসে সিরিয়াল নিয়ে দেখা করতে হবে। এখন সিরিয়াল ব্রেক করা আমার পক্ষে অন্যায় হবে বাইরে অপেক্ষমাণ ব্যাক্তিদের উপর।" রিলেটিভ অনেকটা অনুরোধ করলেন কিন্তু তিনি তার নিয়মে অটল ছিলেন।

hammer-802301_1920.jpg
Image source

বিষয়টি প্রফেশনালিজম এর দিক দিয়ে দেখলে সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। দুপুরে একবার এসে ফেরত যাওয়ার যে আক্ষেপ আর রাগ ছিল তা নিমিষেই হারিয়ে গিয়েছিল। আসলে বিষয়টা এরকম যে আমার নিজের ব্যক্তিগত সার্থের কথা চিন্তা করে দেখলে দুপুরের বিষয়টা খারাপ, কষ্ট করে গিয়েছি একটা দিয়ে দিতেই পারতো তাহলেই আর দুবার আসার দরকার ছিলনা। কিন্তু পরর্বতীতে যেখন তার নীতি দেখলাম যে শুধু আমিই নয় সর্বক্ষেত্রে ই এক নীতি তখন বিষয়টি মানিয়ে নিলাম। কারণ আমাদের সমাজের অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় একটি স্বজনপ্রীতির বিষয়, যেখানে আপনি নিয়মের মধ্য দিয়ে গিয়েও দুর্নীতির শিকার অথচ কিছু মামা-চাচার উপর ভর দিয়ে নিয়মের বাইরে গিয়েও স্বার্থসিদ্ধি করে নিচ্ছে মানুষজন। এইসব জিনিষ দেখতে দেখতে তিক্ত একটা অভিজ্ঞতা এসে পড়েছে তাই নিয়মগুলো নিজের বিপরীতে গেলেই রাগ চলে আসে,কিন্তু নিয়মের পরিপূর্ণ ব্যবহার যখন শুধু আমিনা সর্বক্ষেত্রে সমানভাবে প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায় তখন আর আক্ষেপ নই, সে নিয়মের প্রতি সম্মান জেগে উঠে।

এরুপ নিয়মনীতির প্রয়োগ সমাজের সর্বক্ষেত্রে সমানভাবে করা গেলে মানুষজন তদের নিয়মের ফাক-ফোকড় খোজা বন্ধ করে দিবে। সমাজ চলবে তার আপন গতিতে যেভাবে চলা তার কাম্য। এরুপ সুন্দর একটি সমাজের প্রতিক্ষায় রইলাম। আশাকরি আমাদের সমাজের প্রতিটি স্তরেই নিয়মনীতি গুলো সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগ করা হবে এবং আমরাও তা অনুধাবন করে সঠিকভাবে মেনে নিব। ধন্যবাদ।



0
0
0.000
0 comments