।। পরাধীনতার প্রেমে পাগল যারা ।।
জন্মগতভাবেই আমরা নিজেদেরকে মুক্ত দেখতে পছন্দ করি যদিও আমরা মৃত্যু অবধি পরাধীন। ধর্মীয় দিক থেকে বিবেচনা করলেও আমরা কিন্তু সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল, এ নিয়ে নানা মতামত থাকলেও আমি মনে করি "তার ইচ্ছাতেই সব কিছু হয়।"
এখন এটা নিয়ে পাপ পুণ্যের বিচার করতে যাব না, যাওয়া উচিত ও হবে না। জ্ঞান যে একেবারই সীমাবদ্ধ, কি বলতে কি বলে ফেলি তখন আবার সামাল দিতে পারবো না।
যায় হোক, আমরা মুখে স্বাধীনতার বুলি আওড়ালেও সচেতন বা অবচেতনভাবেই পরাধীন থাকার জন্য মরিয়া। আর তা না হলে চাকরি করার জন্য এত উঠেপড়ে লাগতাম না সবাই। অন্যদিক বিবেচনা করলে বেঁচে থাকার জন্য কিছুতো একটা করতেই হবে, হোক সে চাকরি বা ব্যবসা। অনেকে আছেন যাদের অগাধ সম্পত্তি, বাকি জীবন বসে বসে খেয়ে গেলেও ফুরাবে না।
কিন্তু তাদেরও চাকরি চাই। আর কিছু না, সামাজিক স্বীকৃতির জন্য চাকরি করা আবশ্যক, অন্ততঃ বেকার তকমা থেকে মুক্তিতো মিলবে। মুক্তির পথ খোলা থাকলেও তারা গোলামী করতেই সাচ্ছন্দ বোধ করে। এরাই মূলত পরাধীনতার প্রেমে পাগল, নিজেদের বোধশক্তির উর্ধ্বে গিয়ে সোশ্যাল ডগমার মনোরঞ্জন করতেই বেশি ব্যস্ত থাকে।
সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষের এহেন কর্মকাণ্ড আসলেই হাস্যকর।
তবে, শুধু যে মানুষই সেচ্ছায় পরাধীনতার শেকলে নিজেকে বন্দী রাখে ব্যাপারটা এমন নয়। বনের মুক্ত পাখিও খাঁচায় নিজেকে বন্দী রাখতে পছন্দ করে, যদি এটা বলি বিশ্বাস করবেন?
কষ্ট হবে, কিন্তু আমি নিজে দেখেছি মাত্র কয়েকদিন ভালো খাবার পেয়ে আজীবন আকাশে উড়ে বেড়ানো পাখি সুযোগ থাকা সত্বেও খাঁচায় ফিরে আসে।
শালিক পাখি, শহরে কম দেখা গেলেও গ্রামের দিকে অনেক পাওয়া যায়। মানুষের কথা অনুকরণ করতে পারে বলে খাচায় পোষা পাখিদের মধ্যে বেশ কদর।
তো আমার বড় মামার মেয়ে বায়না ধরলো তার শালিক পাখি লাগবে। উপায়ন্তর না দেখে মামা পাখির খোঁজ শুরু করলো। কপাল ভালো, পাখি পেয়েও গেলো। না, কিনতে হলো না। কৌশলে রাস্তা থেকে ধরে ফেললো আর সোজা খাঁচায়।
খাঁচায় খাবারের অভাব নেই, সারাদিন খায় আর তাকায় থাকে। ২-৩ পর বোঝা গেলো পাখিটা বয়স্ক, তেমন কোনো চাওয়া পাওয়া নেই, খেতে দিলেই খুশি। মরে টরে যায় কিনা ভেবে সিদ্ধান্ত হলো ছেড়ে দেওয়া হবে। সবাই একমত।
সময় সুযোগ বুঝে পেট পুরে খেতে দিয়ে খুলে দেওয়া হলো খাঁচার মুখ। ভাবলেশহীন পাখি একটু নড়ে চড়ে বসলো। বেরিয়েও গেলো। তবে বেশি দূর গেলনা। আশে পাশেই থাকতে লাগলো, যেনো চাইলেই ধরা যাবে।
সারাদিন গেলো, বিকেল হতেই পাখি খোলা খাঁচার মুখ দিয়ে দিব্যি ভিতরে হাজির। সবাই অবাক। এর পর থেকে খাঁচার মুখ খোলাই থাকে, পাখি নিজের মত আসে আর যায়। এত কম দিনে পোষ মানেনি এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে কি বার্ধক্যই তাকে পরাধীন হতে শিখিয়েছে ঠিক যেমনটি মানুষ বুড়ো বয়সে নিজেকে অন্যের ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয়?
হতে পারে। আর যদি সেটাই হয়, তাহলে কিন্তু সকল সৃষ্টির মাঝেই পরাধীন থাকার প্রবণতা বিদ্যমান, সেচ্ছায় বা অনিচ্ছায়।
Congratulations @r-nyn! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
Your next target is to reach 2250 upvotes.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Check out the last post from @hivebuzz:
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!