অনুপ্রেরণা-২
সৃষ্টিকর্তা অঢেল সম্পদের মধ্যে আমাদের যা দিয়েছেন তা হলো একটি সুস্থ শরীর।কিন্তু এতেই যেন আমাদের অবহেলার কমতি নেই।ভেবে দেখুন তো সৃষ্টিকর্তা আমাদের যে অঙ্গ প্রতঙ্গ দিয়েছেন তার বিকল্প কি আমাদের আছে।স্বভাবতই উত্তর হবে "না"।কেননা এমন কিছুই আমাদের তৈরী করা সম্ভব না।যেসব ডামি অঙ্গ তৈরী করা হয় তা কখনোই আসল অনুভুতি দিবে না। এভাবেই আন্টি ভালো কিছুর আশায় দিন গুনতে লাগলেন। কিন্তু অদৃষ্টের পরিহাস বলে একটা কথা আছে। তাই ঘটলো!
তখন বেড এ থাকা রোগীদের খুব কমই যত্ন করা হতো।দেখা যেত যেখানে আন্টিকে তিনবার ড্রেসিং করতে হতো সেখানে করতো শুধু এক -দুইবার! এভাবেই তিনদিন কেটে গেল কিন্তু হাতের কোন উন্নতি নেই।এবার দিন আসলো তাদের বড় ডাক্তারের চেকাপের।ডাক্তার দেখে যাবার পর তার মা আর ভাবিকে ডাকলেন যে অবস্থা খুব খারাপ।এই হাত রাখলে হাড্ডি পর্যন্ত পচন ধরতে পারে।তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কবজি থেকে যতটুকু পচে গেছে তা কেটে ফেলতে হবে।আন্টির মা তখন অচেতন হয়ে যাবার পালা।মেয়ের যে এখনো বিয়ে হয় নি।গোটা একটা জীবন পরে আছে।এই জীবনটা এত ছোট হয়ে যাবে, ভাবতেই পারছেন না তিনি।ডাক্তার একদিন হাতে সময় দিলেন, সিদ্ধান্ত নিতে।আন্টির মা আর তার কাছে গেলেন না।ভাবিকে দেখে আন্টি প্রথমেই জানতে চাইলেন যে ডাক্তার কি বলেছেন।কিন্তু ভাবি তা এড়িয়ে গিয়ে বললেন যে ঠিক হয়ে যাবে সমস্যা নেই।কিন্তু তার মনে একটা খটকা মনে হলো।ছোটবেলা থেকে দুষ্ট মেয়ে থাকায় আশেপাশে নজরতো ছিলোই।
কেমন জানি সবার মন ভারি মেঘে আটকা।কেউ স্বাভাবিক হতেই পারছে না কিন্তু আন্টিকে কেউ বুঝতে দিচ্ছে না যে তার সাথে কি হতে চলেছে।তার মা হঠাৎ অসুস্থ হওয়া তাকে তার ভাবীর বাসায় পাঠিয়ে দেন।দুপুরে যে নার্স আন্টিকে ড্রেসিং করে তার সাথে আন্টি একটু সাহস আর কিছুটা আন্দাজ করেই জিজ্ঞেস করলেন তার হাত কাটা কখন হবে।নার্স কিছুটা অবাক হয়েই বললেন আপনি জানেন! তখন আন্টি বললো জানবো না কেন? সব জানি।এভাবে তিনি সব কথা আদায় করলেন।এবং ভাবতে লাগলেন ভাবীর বাসায় তার মা আছে।তিনি যদি পালিয়ে তার বাসায় যায় অবশ্যই তার মা তাকে নিয়ে এখানে আসবে।আন্টির ভাই তাকে হাসপাতালে থাকার জন্য সামান্য কিছু টাকা দিয়েছিলেন।আর সেটা দিয়ে সে তাদের বাড়িতে যেতে পারবে কমপক্ষে।তাই সে সাথে সাথে সিদ্ধান্ত নিলেন যে যদি তাকে হাত কাটতেই হয়, সে তার ডাক্তার ভাইয়ের কাছেই কাটবে, এখনে না।এবং কখনোই না।একটা চিঠি লিখলেন,শুধু এটাই যে মা আমি বাড়ি যাচ্ছি!
এইদিকে নার্স চলে আসছে তাকে অপরেশন থিয়েটারে নিবে।তখন তাকে জামা দেয় এবং পরিয়ে দিতে চাইলে আন্টি বলে সে একা পরতে পারবে।তখন নার্স যেইমাত্র না চলে গেলেন সাথে সাথে আন্টি দৌড় দিয়ে সোজা বের হয়ে গেলেন। শহর থেকে বাসে, সোজা তাদের বাড়ি চলে গেলেন।তার মধ্যে বাড়ির সবাই জেনে গেছে যে আন্টির হাত কেটে ফেলা হবে আজকে।সবাই তো তাকে দেখে কিছুটা চমকেই গেলো।বিভিন্ন প্রশ্ন করতে লাগলে৷! তিনি কোন উত্তর না দিয়ে সোজা গেলে তার ভাইয়ের কাছে এবং বলেন হাত কাটলে আপনি কাটেন তাও ভালো যে, যত্ন নিয়ে কাটবেন তাও শহরের ডাক্তার এর কাছে যাবেন না।
তার ডাক্তার ভাই এবার মুচকি হাসি দিলেন।বলেন যে,সে প্রথমেই এর চিকিৎসা করতে পারতো।কিন্তু আন্টি যে জিজ্ঞাসা করেছিলো যে সে এর চিকিৎসা করতে পারবে কিনা? শুধু এই প্রশ্নের জন্য তাকে শহরে যেতে বলেছেন।কারন রোগীর যদি ডাক্তারের উপর ভরসাই রাখতে না পারে তাহলে কিভাবে সে তার চিকিৎসা করবে?
এবার আন্টি তার ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চায় এবং তার চিকিৎসা তার ভাই করতে লাগলেন এবং দুই সপ্তাহের মধ্যে তার হাত ভালো হয়ে গেল।শুধু মাত্র মানসিক জোর এবং সৃষ্টিকর্তা যদি না বাচাতো তাহলে হয়তো তার কষ্টের সীমা থাকতো না।
এরকম হাজারো অনুপ্রেরণা নিয়েই আসলে পথ চলতে হয়।মাঝে মাঝে কঠিন সময়গুলোতে নিজের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয় এটাও জীবন অংশ। এভাবেই কন্টকময় পথকে মসৃণ করেই চলতে শিখতে হবে।
Your content has been voted as a part of Encouragement program. Keep up the good work!
Use Ecency daily to boost your growth on platform!
Support Ecency
Vote for Proposal
Delegate HP and earn more