Movie review: The Japanese Wife(2010)

avatar


Source


আমরা অনেকেই হয়তো ছোটবেলায় “পেন ফ্রেন্ড” শব্দটি কম-বেশি শুনেছি।এই পেন ফ্রেন্ড বলতে আমরা আসলে যা বুঝি, তা হলো চিঠিতে বন্ধুত্ব! দূর ঠিকানার কোন এক অপরিচিত মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া।এ শব্দটা ছোটবেলায়, প্রথম শুনতে পাই আমি।যা আমাদের দেশে বলা হতো পত্র মিতালি!! যদিও তখন পত্র মিতালির অর্থ সেভাবে বুঝতাম না। পরে একটু বড় হয়ে উঠার পর, আম্মুর মাধ্যমেই প্রথম এর অর্থ জানি।পত্র মিতালি ব্যাপারটা এমন, আগের সময়ে বেশীর ভাগ মানুষ রেডিও শুনতো।বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যমই ছিলো এটাই। টেলিভিশন ও ছিলো।তবে সেটা খুব কম মানুষের ঘরেই ছিলো।এখানে ঘর বলার একটা ছোট্ট কারণ আছে।ঘর এবং বাড়ি দুটি ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করা হয়।তা হলো,অনেকগুলো ঘর মিলে তাকে বাড়ি বলা হয়।যেটা হরহামেশাই আমি ভুল করি।যাচ্ছি কারো ঘরে কিন্তু বলছি তাদের বাড়ি গিয়েছি! এখন আসি পত্র মিতালি প্রসঙ্গে।তো বেতার এর মাধ্যমে অনেকেই তাদের বাসার ঠিকানা দিয়ে বন্ধু খুঁজার আবেদন করতো।

এভাবে ঠিকানা দিয়ে অপেক্ষা করতো, অজানা মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করার।বিষয়টা আমার কাছে তখন থেকেই বেশ মজারই লাগতো।মনে হতো আমার যদি একজন পত্র মিতালি বন্ধু থাকতো, খারাপ হতো না!অন্তত নিজের কিছুটা দুঃখ, অজানা কারোর সাথে ভাগাভাগি করে কিছুটা তো হালকা হওয়া যেত! তখন থেকেই আমার ইচ্ছে যে, আমার একজন পেন ফ্রেন্ড থাকবে। যাকে আমিও চিঠি লিখবো, সে ও আমাকে লিখবে। যদিও ডিজিটাল সময়ে এসে, তা একদমই সম্ভব না আর ব্যস্ততার কারণে তার সুযোগ ও কম।সবকিছু মিলিয়ে আজ অবধি, তা আর হয়ে উঠেনি। এতক্ষণ যে আমি পেন ফ্রেন্ড বিষয়টি নিয়ে অনেক ব্যাখ্যা দিলাম তার প্রধান কারণ হলো আমি সাম্প্রতিক যে সিনেমাটি দেখেছি তার মূখ্য ভূমিকা হলো এটাই।এজন্যই পেন ফ্রেন্ড বা পত্র মিতালি নিয়ে আমার এত বকবকানি! এ মুভিতে পেন ফ্রেন্ড বিষয়টি বেশ গুরুত্ব পেয়েছে।


মুভি রিভিউ : The Japanese Wife
ক্যাটাগরি :রোমাঞ্চকর, ড্রামা, ট্র্যাজেডি
পরিচালক :অপর্ণা সেন
প্রধান চরিত্রঃ মিয়াগি(Chigusa),স্নেহময়(রাহুল বোস),সন্ধ্যা (রাইমা সেন), মাসি(মৌসুমী চ্যাটার্জী) সহ আরো অনেকে।
নিজস্ব রেটিং : 8.5/10


ছবির শুরুটা এমনযে,ভারতের ছোট্ট এক গ্রামের ছেলে হলো স্নেহময়।মা-বাবা মারা যাবার পর বিধবা মাসির কাছে থেকেই বড় হয়ে উঠা।যাকে বলে মাসি ই অন্ত প্রান।তাদের গ্রামটি সুন্দরবনের আশেপাশে এলাকার একটি গ্রাম।খুব অদ্ভুতভাবেই তার সাথে পেন ফ্রেন্ডশিপ হয়, জাপানের তরুণী মিয়াগীর। নিজেদের বন্ধুত্ব এর আড়ালে তারা প্রেমে পরে নিজেদের, অতপর প্রেম পরিনতি বিয়েও করে ফেলে চিঠির মাধ্যমে। বিয়ের সাক্ষী হিসাবে মিয়াগী দেয় সিলভারের আংটিতে নিজের খোদাই করা নাম আর স্নেহময় দেয় শাঁখা আর সিঁদুর।কর্মজীবনে স্নেহময় ছিলো একজন স্কুল মাষ্টার। তাই জাপানে যাবার মতো অত টাকা তার ছিলো না।তাই সে যেতে পারেনি মিয়াগীর কাছে।আবার মিয়াগীর মা খুব অসুস্থ।সে তার অসুস্থ মাকে একা রেখে,এদেশে আসতে পারে না।মিয়াগী পরবর্তীতে এই সিদ্ধান্ত নেয় যে,তার মা কিছুটা সুস্থ হলে সে এদেশে চলে আসবে।

এভাবে সময় কেটে যেতে থাকে।সময়ের সেই স্রোতে পনের বৎসর কেটে যায়।কিন্তু কারো সাথে কারো দেখা নেই।পনেরো বছরের এই বিভিন্ন সময়ে তারা দুইজন দুইজনকে বিভিন্ন উপহার দেয়।স্নেহময় যোগ্য স্বামীর মতোই মিয়াগীকে তার সমস্ত দিনের কথা বা আবেগ কিছুই জানাতে কার্পণ্য করেনি। একসময় মিয়াগীর মা মারা যায়। তাহলে তো স্নেহময়ের কাছে চলে আসতে মিয়াগীর আর কোনো পিছুটান নেই।সে কি আসতে পারে?


না! তারপরও তাদের এক হওয়া হয়নি!অদৃশ্য বাধা হিসেবে মিয়াগী নিজেই কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত হলো। তার অসুস্থতা স্নেহময়কে বেশ ভাবিয়ে তুললো! স্কুলে ছুটি নিয়ে সে যেতে লাগলো ওই সব নামকরা সব আয়ুর্বেদ ও কবিরাজি ওষুধের খোঁজে, এই আশায় যদি মিয়াগী সুস্থ হয়।কিন্তু অদৃষ্টির পরিহাসে নিজেই নিউমোনিয়ায় প্রাণ হারায়। এরপর সেই দিন আসে! মিয়াগী আসে স্নেহময় এর বাড়িতে,যখন স্নেহময়ই এই দুনিয়ায় নেই!এর মাঝে আরো দুইটি প্রধান চরিত্র থাকে এক হলো স্নেহময় এর মাসি অন্যজন সন্ধ্যা। স্নেহময়ের মাসির সইয়ের মেয়ে, যার সাথে তার প্রথম বিয়ের কথা হয়।কিন্তু মিয়াগী প্রতি ভালোবাসা জন্য,স্নেহময় সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি।কিন্তু পরবর্তীতে সন্ধ্যাও বিধবা হয়ে তার ছেলে পল্টুকে নিয়ে স্নেহময়ের বাড়িতে আসে।পল্টুর সাথেও খুব সুন্দর একটা সম্পর্ক ও দেখা যায় স্নেহময়কে।

মুভিটা দেখা শুরু থেকে এক অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছে।এটি বলা চলে একটি নিখুঁত ভালোবাসার গল্প।মুভির প্রত্যেকটা মুহূর্ত এতোটাই হৃদয়স্পর্শী যে, কিছু সময় আমার চোখ থেকে মনের অজান্তেই দু ফোটা জল নিঃশব্দে পড়েছিল।

যে কেউ এই চমৎকার মুভিটি উপভোগ করতে পারবেন।সবচেয়ে বড় কথা ইউটিউবে সিনেমাটি আছে।তাই অনায়াসেই দেখা যাবে।আর আমার বন্ধুকে ধন্যবাদ, আমাকে সুন্দর একটা সিনেমা দেখার পরামর্শ দেয়ার জন্য :)



0
0
0.000
1 comments