"আত্মকেন্দ্রিক রাজনীতির অপচর্চা"

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্যে নিজেকে খুব সহজেই মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে ফেলা যায়, তাহলে কেনইবা সস্তায় ক্রয় করা মহিলার বোরকার আড়ালে লুকানোর অপচেষ্টা। আরে ভাই আপনার মাঝে কি এই সাধারন জ্ঞানটাও নাই, বোরকা পড়লেই নিজের লিঙ্গ পরিবর্তন হয় না, নিজের লিঙ্গ পরিবর্তনের এতই শখ থাকলে আপারেশন করে লিঙ্গ পরিবর্তন করতেন। সস্তা রাজনীতি করতে করতে আপনার মাথাটা একেবারেই গেছে, তাই সবকিছু সস্তাই খুজেন অথবা আত্মকেন্দ্রিক রাজনীতি করতে করতে কোকিলের মতো চালাকভাবা শুরু করেছেন নিজেকে। কাকের বাসায় ডিম পেড়ে আসবেন, কাক মশাই বুঝতেও পারবে না আর গোপনে আপনার স্বার্থ উদ্ধার হয়ে যাবে। পুরুষ কোকিল হয়েও আপনারা কাকের বাসায় ডিম পাড়ার যে ব্যর্থ চেষ্টা মাঝে মাঝে করেন সেটা কাক তথা সাধারন জনগন মাঝে মাঝে বুঝতে পারেন, আর আপনাদের মতো শাহেদের আত্মকেন্দ্রিক রাজনীতিবিদদের সত্যিকারের ইতিহাসের কাব্য রচনা হয়, রচিত হয় আবার নতুন করে মুখোশের আড়ালে নতুন কোন পিচাশ অথবা শয়তানের বংশধরের জীবনি।

IMG_20200815_163833.jpg

আর কতো আত্মকেন্দ্রিক রাজনৈতিক ব্যক্তিদের জীবনি পড়তে হবে আমাদের। এদের ভীড়েতো আমরা মহান মহান রাজনৈতিক ব্যক্তিদের জীবনি ভূলতেই বসে গেছি প্রায় অথবা এদের সাথে মহান রাজনৈতিকবিদদের চরিত্রকে মিলিয়ে জগাখিচুড়ি বানিয়ে ফেলছি। এখানে আপনার এবং আমার মতো সাধারন মানুষের বিন্দু পরিমান ভূল নাই। যদি কোন দেশের রাজনৈতিক বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অতীতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সামান্যতম ধারনা পাওয়া না যায়, তাহলে এতে সাধারন জনগনের দোষটা ঠিক কোথায় বলুনতো। দেশের আমজনতারা তো রাজনীতির কিছুই বোঝে না। তারা শুধু বোঝে পেটনীতি। দেশের রাজনীতিবিদরা যদি নিজেদের মধ্যে লড়াই করে নিজেদের বর্তমান এবং অতীতকে ধ্বংসের কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে দেয়, আমজনতা হিসাবে শুধুমাত্র বিচারের ফলাফলটাই জানতে বা শুনতে পারব আমরা, আমাদের আর করার কিছুই নেই এখানে।

IMG_20200815_163858.jpg

জানি না এমন রাজনৈতিক অবকাঠামোর উপর দাড়িয়ে থাকা রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিকে গনতন্ত্র বলে কিনা? কিভাবে বলবো আমরা বলেন, আমরাতো হনতন্ত্রের সঠিক সংজ্ঞাটাও জানি না। পাঠ্যপূস্তকে পড়েছি "Democracy is a Government of the people,by the people and for the people". কই আমরাতো বাস্তবে এমনটা দেখতে পারি না। সরকার ঠিকই গঠিত হচ্ছে গনতান্ত্রিক উপায়ে, কিন্তু সরকার গঠনের পর রাজনীতি হয়ে পড়ে আত্মকেন্দ্রিক। আত্মকেন্দ্রিক রাজনীতি বিশালাকায় বটবৃক্ষ সদৃশ, যারা নিজের বৃহত্তর স্বার্থ উদ্ধারে সারাজীবন বৃথা চেষ্টা করে গেছেন তারা এই বটবৃক্ষের ছায়াতলে এসে বিশ্রাম নিতে নিতে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করে, নিজের বিলাসবহুল বাসভবনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে গিয়ে পুনরায় বিশ্রাম নিতে পারে।

পৃথিবীর বুকে বাংলা নামের ভূখন্ডে স্বাধীনতার লাল সবুজের পতাকার উড্ডয়ন আবাধ করতে, কোটি কোটি বাঙ্গালীকে পাকিস্তানিদের দাসত্ব হয়ে মুক্ত করতে যে বীর বাঙ্গালী রাজনীতির যতার্থ সংজ্ঞা এবং জনগনের স্বার্থ কেন্দ্রিক রাজনীতির প্রকৃষ্ট উদাহরন দিয়ে গেছেন, আমরা তার উত্তোরসরি হয়ে কি ধরনের রাজনীতির চর্চায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছি আজকাল। সত্যি এটা চরম লজ্জাজনক বিষয় সমগ্র বাঙ্গালী জাতির জন্য। যে দেশের জন্মই হয়েছে মহান রাজনৈতিক পরিকল্পনা এবং মহান কিছু নেতার আত্মবলিদানে, সেই দেশতো স্বাধীনতার পঞ্চাচ বছর পড়ে উন্নয়নের দিক থেকে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোকে পিছনে ফেলে আসার কথা। আরে ভাই, অতিরিক্ত জনসংখ্যার দোষ আর কতো দিবেন, তাহলে তো চায়না, ভারতের অবস্থান আমাদের অনেক নিচে থাকত।

IMG_20200815_163812.jpg

দোষটা হয়তোবা স্বার্থলোভী বাঙ্গালী রাজনীতিবিদদের নয়, দোষটা ঠিক বাংলাভাষার। ইংরেজিতে যেটা পলিটিক্স, বাংলায় সেটা রাজনীতির যার সমাস হচ্ছে, "রাজার নীতি"। অপরদিকে বাংলার ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় হাজারো রাজাদের জীবন ব্যবস্থার। ইতিহাসের রাজাদের ক্ষমতা, সম্পদ, বিলাসিতার গল্প শোনে নাই এমন বাঙ্গালী মেলা ভার। তাই রাজনীতি করে যদি রাজাই হতে না পারলাম, তাহলে রাজনীতি করার চেয়ে না করাই ভালো। বাংলাভাষা এবং রাজার নীতির কোন প্রকার দোষ নাই এখানে। শুধু একটু গন্ডগোল হয়ে গেছে বুঝতে, নীতি শব্দের অর্থকে সব রাজনীতিবিদরা ভূলক্রমে জীবন ব্যবস্থা বুঝে বসেছে। অপরদিকে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার আমাদের দেশে বংশ পরমপরায় প্রাপ্ত একটি জনসম্পত্তি শোষনমুলক চাকুরী, সেহেতু পূর্বপুরুষেরা যে পথে হেটেছেন উত্তরসূরীরা কেনইবা তার ব্যতিক্রম করবেন।

IMG_20200815_163918.jpg

ব্যক্তিস্বার্থের রাজনীতি বাংলার বুকে প্রতিষ্ঠিত করার মহতি উদ্দেশ্য নিয়েই, বাংলার বন্ধু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয় ১৯৭৫ সালের আজকের এই দিনে। আত্মকেন্দ্রিক রাজনীতির সুপ্রতিষ্ঠা জাতির পিতাকে হত্যার মূখ্য কারন বলে আমি মনে করি। অন্যথায়, তৎকালিন রাজনীতিবিদরা যদি জনগনের রাজনীতি করার লক্ষ্যে বলিয়ান থাকতেন, শেখ মুজিবের হয়তোবা অপঘাতে মৃত্যু সেদিন হতো না এবং সেই খুনি জনগোষ্ঠী স্বার্থক হয়েছেন বাংলার বুকে চিরতরে আত্মকেন্দ্রিক রাজনীতির নীতির পটভূমি রচনা করতে।

বর্তমানে এই আত্মকেন্দ্রিক রাজনীতির শিক্ষা অলিতে গলিতে, মাঠে ময়দানে, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, পাড়ায়, মহল্লায়, চায়ের দোকানে, নাইট ক্লাবে, ক্যাসিনোতে সব জায়গায় বিনা বেতনে দেয়া হচ্ছে। রাজনীতির এই শিক্ষা নিতে লাগেনা কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা, লাগে শুধু মিশিল মিটিং করার সৎসাহস। দলের সক্রিয় সদস্য হলেই আপনাকে দেয়া হবে স্বার্থ উদ্ধারের ক্ষমতা, সেটাকে আপনি যেমন খুশি ব্যবহার করতে পারেন। আপনার এলাকার পুকুর পাড়ে প্রেমিক প্রেমিকা বসে প্রেম করতে দেখলে আপনি তাদের মারধর করে তাদের মোবাইল ফোন এবং টাকা কেড়ে নেবার ক্ষমতা পেয়ে যাবেন, আরও পেয়ে যাবেন নিজের এলাকায় মাদক ব্যবসা করার বৈধ লাইসেন্স, সামন্য কিছু অর্থের বিনিময়ে আপনি গরীবদের চাষের জমি জালিয়াতি করে কোন ধনী ব্যক্তিকে মালিক বানাতে পারবেন। রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজ ক্যাম্পেসের যে কোন ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করতে পারবেন। আরও পাবেন নিজ এলাকায় চাদা বাজি করার বৈধ লাইসেন্স। টেন্ডারবাজীতো পাচ্ছেন বোনাস হিসাবে। দলের রাজনৈতিক সক্রিয় সদস্যে আপনি, দলতো আপনাকে মাসিক কোন বেতন ভাতা প্রদান করে না। দলে সক্রিয় থাকতে গেলে কত খরচ, আপনারা বুঝবেন কি। দল যদি তাদের কর্মীদের এইসব সামান্য সুযোগ সুবিধা না প্রদান করেন তাহলে, দলের রাজনীতি করবে কে ভাই। দলের জন্য মিশিল মিটিং করবে কে ভাই। বড়ি বড়ি দেম ম্যা এছা ছোটি ছোটি বাত হোতা রেহেতাহ্যা।

IMG_20200815_163747.jpg

এতো গেল চুনোপুঁটিদের রুপকথার গল্প। রাঘববোয়ালদের কৃতকর্মের গল্প আমাদের কারোই আজানা নয়। চলতি বছরের গল্পের বর্ননা দিতে গেলেই আমার লেখাটা আর ব্লগ থাকবে না,উপন্যাস হয়ে যাবে। গল্পের শুরু করেছিলাম যে শাহেদকে নিয়ে, তাকে দিয়েই সমাপ্তি টানা যাক, শাহেদ হয়তোবা কোন রাজনৈতিক পদে বহাল ছিলেন না, কিন্তু তিনি সেই আত্মকেন্দ্রিক রাজনীতির বটবৃক্ষের ছয়ার অনেকটা অংশই পেয়েছিলেন। সেই ছায়ার জাদুকরি মায়ায় তিনি ঢাকা শহরের লাইসেন্সহীন মেডিকেল পরিচালনা করতেন এবং সেই মেডিকেলে করোনা ভাইরাসের শনাক্তকরনের ভূয়া ব্যবসাও পরিচালনা করে আসছিলেন। সামান্যতম রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে শাহেদ যদি এতো কিছু করতে পারেন, যারা রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থা পরিচালনার জন্য বৈধ ক্ষমতাদখল করে আছেন, তারা নিজের ব্যক্তিস্বার্থের রাজনীতির কেমন সদব্যবহার করছেন, আপনারাই ভালো করে চিন্তা করে দেখেন।

IMG_20200815_163947.jpg

জাতি আজ তার পিতাকে হারিয়েছে, শুধুমাত্র আত্মকেন্দ্রিক রাজনীতির অপচর্চার কারনে। রাজনীতি রাজার নীতি, রাজার জীবন ব্যবস্থা নয়, রাজনীতি জনগনের স্বার্থের নীতি একক কোন স্বার্থের নয়। জাতির আমজনতারা হয়তোবা বিষয়টা বুঝে গেছেন এতোদিনে, কিন্তু যাদের বোঝার তারাইতো এখন অবধি বোঝার বিন্দু মাত্র চেষ্টা করেন নাই।

জাতির পিতার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।

ধন্যবাদ সকলকে।



0
0
0.000
4 comments
avatar

ব্যক্তিস্বার্থের রাজনীতি বাংলার বুকে প্রতিষ্ঠিত করার মহতি উদ্দেশ্য নিয়েই, বাংলার বন্ধু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয় ১৯৭৫ সালের আজকের এই দিনে। আত্মকেন্দ্রিক রাজনীতির সুপ্রতিষ্ঠা জাতির পিতাকে হত্যার মূখ্য কারন বলে আমি মনে করি।

তবে আমি তো শুনেছি ৭২-৭৫ দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। আর অনেকেই তো তার একনায়কতন্ত্র/বাকশালকেই তার এই নির্মম মৃত্যুর জন্য দায়ী করে। এবং অনেকেই তার মেয়ে শেখ হাসিনাও সে পথেই হাঁটছে বলে মনে করেন।

তাছাড়া সে সময় দেশে চুরি চামারীতে নাকি ভরে গিয়েছিল। আর সে কথা তিনি নিজেই বলেছিলেন। সবাই পেলো সোনার খনি আমি পেলাম চোরের খনি।

আবার সেই সমি নাকি রক্ষী বাহিনীও ছিল। দেশের পুলিশ আর্মি থাকতে আলাদা একটা বাহিনী। তবে অনেকেই বলে এই বাহিনীর কাজেই নাকি ছিল লুটপাট করা।

আমার কাছে শুধুমাত্র ব্যাক্তিস্বার্থের রাজনীতিকে দোষারোপ করলে এই রাজনীতি এভাবেই ব্লেইম গেইম খেলায় চলবে।

0
0
0.000