প্রথমবার রক্ত দেওয়ার অভিজ্ঞতা।
সকাল ১০ টা বাজে। ঘুম ভেঙে উঠে বসলাম। চোখ বন্ধ হয়ে আসছে । ঘুম হয়নি রাতে ঠিক মতো। বসে বসে ঝিমুচ্ছিলাম ঠিক তার কিছু সময় পর জুবায়ের ফোন করলো। ফোন ধরার পর সে বলল
-রাফি তোর রক্তের গ্রুপ কি?
আমি বললাম,
-B+ কেন রে?
উত্তরে জানতে পারলাম আমাদের কলেজের এক বন্ধুর দূরসম্পর্কের মাসীর রক্তের খুব প্রয়োজন।সে প্রেগন্যান্ট। সিজারে বেবি হবে তাই রক্ত লাগবে। আমাকে জুবায়ের বল্লো রাফি তুই কি দিতে পারবি তাহলে?আমি অত কিছু না ভেবে হ্যাঁ বলে দিলাম। আমি আমাদের বন্ধুদের একটি ফান্ড এর সদস্য। আমাদের ফান্ড এর নাম "ব্রাদারহুড অরফান ফান্ড"। আমাদের ফান্ড টা গরীব লোকেদের পাশে থাকা,অনাথ শিশুদের পড়াশোনা করানো,বাড়ি নেই এমন মানুষের পাশে থাকা,রক্ত দেওয়া সহ আর অনেক অনেক সমাজ সেবা মূলক কাজে নিয়জিত আছে। ফলে আমার রক্ত প্রদান করাটা দায়িত্ব। বন্ধু বলে,
-কখন যাবি রক্ত দিতে?
আমি বললাম,
-আজ তো শুক্রবার! এখন গেলে নামাজ পড়া হবেনা তো!
বন্ধু বলল,
- হুম ঠিক বলেছিস। তাহলে চল নামাজ আদায় করে খেয়ে ২.৩০ এর দিকে রউনা হই।
আমি বললাম, - আচ্ছা ঠিক আছে।
দুপুরের নামাজ টা দুই বন্ধু একসাথেই আদায় করলাম। তারপর খাবার খেতে নিজ নিজ বাসায় রউনা হলাম আমরা।। খাবার খাওয়া শেষ হলো।জুবায়ের কে ফোন করলাম। ওর আসতে বেশি দেরি হলো না। খুব তারাতাড়ি চলে এল জুবায়ের।তারপর দুই বন্ধু মিলে রউনা দিলাম হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। মাঝপথে হাসিব আমাদের সাথে একত্রিত হলো। ওর মাসীর রক্ত লাগবে। ও আমাদের দেখে খুব খুশি হয়ে গেলো।বলল, - বন্ধু তোরা এসেছিস!
তারপর এক সাথে হাসপাতালে আসলাম। গিয়ে দেখি খুব একটা ভিড় নেই। আমার আগে আর একজন রক্ত দিবে। তার রক্ত নেওয়া হলো। আমার আগে কখনো রক্ত দেওয়ার অভিজ্ঞতা হয়নি। তাই আগে রক্ত পরিক্ষা করতে হবে। আমাকে আগে রক্ত পরিক্ষা করার জন্যে কিছুটা রক্ত দিতে হবে। আমার রক্ত পরিক্ষা করার জন্য রক্ত নেওয়া হলো। বের হয়ে এসে বাহিরে বসলাম সবাই। আমার কেমন মাথা ঘুরতে লাগলো। ভয় হচ্ছিলো খুব।বন্ধুরা সান্ত্বনা দিল। বলল,
" কিছু হবেনা। তুই শুধু শুধু ভয় করিস না।"
আমার রক্ত পরিক্ষার রিপোর্ট এসে পড়ে কিছু সময় পর।সব ঠিক আছে। এখন রক্ত দেওয়ার পালা। রক্ত নিতে একটা রুমে নিয়ে গেল আমায়। হাতে সুই এর মতো কি একটা ভরে দিল ঠিক আমার রক্ত নালির ভিতর।আর একটা বল দিয়ে বলটা চাপতে বলল। কিছু সময় পর রক্ত নেওয়া শেষ হলো। আমার ৩০ মিনিট শুয়ে থাকতে বলা হলো।বেশ কিছু সময় পর বন্ধুরা সব আমার কেবিনে এল। আমাকে দেখতে। এসেই রসিকতার ছলে বলল
- কিরে বেঁচে আছিশ?
আমি মুখ বাকিয়ে বললাম,
-তোরা থাকতে মরব কি করে?শান্তিতে মরতেও তো দিবিনা!
হাসা হয়ে গেলো এক দফা!
সব কাজ শেষ এখন বিদায় নেবার পালা। যাবার সময় একজন এসে বলল আমি যাকে রক্ত দিয়েছি সে আমায় দেখতে চাইছে। ভাবলাম দেখা করেই আসি । দেখা করতে উপরে গেলাম। গিয়ে জানতে পারলাম তার আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। তার পরিবার এর কেউ আসেনি দেখতে। সে আমায় দেখে কান্না করে দিল। আমার জন্য অনেক দোয়া করলেন তিনি । আসলে মানুষের দোয়া অনেক বড় কিছু।আমার জন্য অনেক কিছু! মনে অনেক শান্তি পেলাম। মনে হলো ভাল কাজ করলাম একটা। তবে তাকে দেখে খুব খারাপ লাগলো। তাকে বললাম কান্নাকাটি না করতে।আর কোন সাহায্যের প্রয়োজন হলে আমাদেরকে জানাতে। বলে বিদায় নেবার পালা এল। বন্ধুরা মিলে বিদায় নিয়ে চলে এলাম বাসায়। খুব ভালো একটা অনুভুতি ছিল। তবে পরদিন বাজে একটা সংবাদ পেলাম। জানতে পারলাম তার বাচ্চা টা মারা গেছে। খুব খারাপ লাগলো শুনে। আল্লাহ তাকে শক্তি দিক সব কিছু সয়ে যাবার।আর জান্নাতের পাখিটিকে তার মায়ের জন্য অপেক্ষারত রাখুক এই দোয়া করি। এই ছিল আমার প্রথম রক্ত দান করার অভিজ্ঞতা।
Hi @troublemakerrr, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rehan12!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON
Great job bro🙏❤.
Thanks bro❤